Thikana News
০৩ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫





 

সাম্প্রতিক ভাবনা

সাম্প্রতিক ভাবনা





 
বাহারুল আলম

জুন মাসের প্রথম পক্ষকালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক কয়েকটি বিতর্কিত আইন ও আদেশ বাতিলের ঘটনা মিডিয়াসহ সুধীমহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত হতে দেখা যায়। বহু দশক ধরে প্রচলিত এসব আইন ও আদেশ বাতিলের ঘটনা আগামী দিনের মার্কিন রাজনীতি ও সমাজজীবনে সুদূর প্রসারী প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে এসব রায়কে স্ব স্ব মতাদর্শগত দিক থেকে কেউ কেউ যুগান্তকারী (Monumental), আবার কেউ কেউ মার্কিন ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসাবে বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছেন। 
সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্প রায়ের ঘটনাকে A great day for America বললেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন রায়ে তার গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গত ৯ জুন কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন (College affirmative action) এবং ১০ জুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষিত স্টুডেন্ট লোন ফরগিভনেস (Student loan forgiveness order) আদেশ বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট একই দিন অপর একটি রায়ে সমকামীদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে যে মতামত দেন, তাতে তাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মার্কিন সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতিসহ ৯ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে কোনো আইন ও আদেশ বহাল  বা বাতিল হয়। বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের দ্বারা মনোনীত ছয়জন এবং ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের দ্বারা মনোনীত তিনজন  বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসহ এবং বিচারপতি স্যামুয়েল অ্যালিটো প্রেসিডেন্ট জজ ডাব্লু বুশ কর্তৃক মনোনীত। বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বাবা প্রেসিডেন্ট হারবার্ট ওয়াকার বুশ কর্তৃক মনোনীত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে তিনজন বিচারপতিকে মনোনয়ন দেন, তারা হলেন- বিচারপতি নীলগরসার্চ, বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেট ও বিচারপতি ব্রেট ব্যাভানো। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত তিনজন বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি সোনিয়া সোটো মায়ার, বিচারপতি এলেনা ক্যাগান এবং বিচারপতি কাতানজি ব্রাউন জ্যাকসন।

উপরে বর্ণিত আইন ও আদেশ বাতিল ছাড়াও ২০২২ সালের জুনে ১৯৭৩ সালে প্রণীত গর্ভপাত বৈধকরণ আইন, যা রো ভার্সাস ওয়েড নামে পরিচিত, বাতিল হয়। অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন আইন প্রণীত হয় ১৯৭৮ সালে।
গর্ভপাত বৈধকরণ আইনে নারীদের জন্য প্রথম ছয় মাসকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গর্ভপাত বৈধ করা হয়। বাইডেনসহ বিভিন্ন প্রগতিবাদী নারী সংগঠন ও মহল এই আইন বাতিলের তীব্র নিন্দা জানান। তারা এটাকে নারীর শরীরের উপর তার পূর্ণ অধিকারের বিরুদ্ধে নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আখ্যা দেন। 

অপরদিকে রিপাবলিকান ও গর্ভপাত বিরোধী মহল রায়ে উল্লাস প্রকাশ করে জানান যে, এর ফলে নারীর জন্য ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপহার শিশু হত্যা বন্ধ হবে। তাদের মতে, এই আইনের সুযোগ নিয়ে প্রতি বছর যে বিপুল সংখ্যক শিশুর ভ্রুণ হত্যা করা হয়, তা মানবিক, নৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে অত্যন্ত জঘন্য কাজ।

এসব মহল মাত্র তিনটি, যেমন- ধর্ষণ, ইনসেস্ট (পিতা ও কন্যার মধ্যকার যৌন সম্পর্ক জনিত) এবং প্রসূতি মায়ের জীবন বিপন্ন হতে পারে এমন ক্ষেত্রে গর্ভপাতের পক্ষে মত দেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ভর্তির ক্ষেত্রে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর (প্রধানত কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক) শিক্ষার্থীরা যাতে যাতে বিশেষ সুবিধা পায়, সে উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন আইন প্রণীত হয়। এই আইন উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সমতা ও বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। 

অবশ্য রিপাবলিকানসহ কোনো কোনো মহল এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষ করে জানান যে, এর ফলে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার পরিবর্তে রেইসকে (Race) গুরুত্ব দেয়া হয়, যা সঠিক নয়।

তারা উল্লেখ করেন যে, SAT-তে ২০০ নম্বর পেয়ে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক শিক্ষার্থী নামকরা কলেজে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হলেও শ্বেতাঙ্গ বা অন্য জনগোষ্ঠীর একজন ছাত্র ৪০০ নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেতে ব্যর্থ হন। 

তাদের মতে মেধার বদলে এভাবে গায়ের রঙকে প্রাধান্য দেয়া অন্যায় ও অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্ট এই মতের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।

স্টুডেন্ট লোন ফরগিভনেস আদেশের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ছাত্রের ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত স্টুডেন্ট লোন মওকুফের ব্যবস্থা করা হয়। বাইডেন এর দ্বারা ঋণের ভারে জর্জরিত ছাত্রদের ঋণভার হালকা করতে চেয়েছিলেন। এই মওকুফের ফলে রাষ্ট্র প্রায় ৪৩০ বিলিয়ন ডলার হারাবে বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক এই আদেশে উপকৃত হতেন বলেন খবরে জানা যায়।
বাইডেন কর্তৃক স্টুডেন্ট লোন মওকুফের সঙ্গে বিপুল অংকের অর্থ জড়িত বিধায, তা প্রেসিডেন্টের একক কর্তৃত্বের আওতা বহির্ভূত বলে কোর্ট রায় দেয়। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়া  আবশ্যক। বাইডেন অবশ্য কোর্টের রায়কে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা (Misinterpretation) বলে উল্লেখ করেন। বাইডেনের কাছে স্টুডেন্ট লোন মাফের ইস্যুটি এতোটাই প্রিয় যে, তিনি ১৯৬৫ সালের হায়ার এডুকেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এ লোন মাফ করা যায় কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সেক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্ট বাগরা দেবে না, সেটা হলফ করে বলা যায় না।

অপর যে আইনটি বাতিল হয়, সেটি সমকামী অধিকার (Gay rights) সংক্রান্ত।

ওহাইও রাজ্যের একটি ওয়েব ডিজাইনার প্রতিষ্ঠান জনৈক সমকামী দম্পত্তির চাহিদা মাফিক সমকামী বিয়ের (Same sex marriage) পক্ষে একটি ওয়েব ডিজাইন করে দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়। ওয়েব ডিজাইনার প্রতিষ্ঠান নিজেদের ধর্মীয় ও ফ্রি স্পিচের অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে সমকামী দম্পত্তির ওয়েব ডিজাইন করে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সুপ্রিম কোর্ট ওয়েব ডিজাইনার প্রতিষ্ঠানের মতের পক্ষে মত দেন। এই রায়ে সমকামীদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
উপরে বর্ণিত রায়সমূহকে বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটদের অনুসৃত নীতি আদর্শের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা (Setback) বলে কোনো কোনো মহল মনে করেন। অবশ্য বাইডেন এসব রায়কে তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইস্যু বানিয়ে রিপাবলিকানদের কথিত গণবিরোধী তৎপরতা সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া শক্তিশালী চাকরি বাজার (Robust job market), ক্রমহ্রাসমান মুদ্রাস্ফীতি (৮.৪ ভাগ তেকে বর্তমান ৪ ভাগ) এবং বেকারত্বের নিম্নহার (৩.৫ ভাগ) বাইডেনের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

লেখক : কলামিস্ট।

কমেন্ট বক্স