বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেছেন। ০৯ আগস্ট (শুক্রবার) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি। বিষয়টি নিয়ে আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি জানতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ১০ আগস্ট (শনিবার) অর্থ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন তিনটি বিভাগের সঙ্গে তার বৈঠক রয়েছে। সেখানে হয়তো বিষয়টি জানা যেতে পারে।
মূলত গত ৫ আগস্ট (সোমবার) শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর বা প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে গভর্নর নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সেই হিসেবে গভর্নরকে পদত্যাগও করতে হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আব্দুর রউফ তালুকদার তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বুধবার (০৭ আগস্ট) একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তখন একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরও চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ‘পদত্যাগে রাজি’ করান। যেসব শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে সাদা কাগজে সইয়ের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বা যাঁদের পদত্যাগে রাজি করানো হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাঁরা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১১ জুন গভর্নর হিসেবে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ পান আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বছরের ১২ জুলাই তিনি গভর্নর হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার জেরে সাংবাদিকেরা গভর্নরের সব ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এদিকে ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থতা, ডলার-সংকটসহ নানা কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে রয়েছে। চলতি বছর গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াও প্রশ্নের মুখে পড়ে।
ঠিকানা/এএস