বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্ষমতার পটপরিবর্তনে একটি দুষ্টচক্রের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক কেন্দ্র নিউ মার্কেটের চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের নেতৃবৃন্দ। দেশের পটপরিবর্তনের সাথে সাথেই আত্মগোপনে থাকা ডিএসসিসি’র সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের অনুসারী পরাজিত শক্তির লোকজন নিজেদের লেবাস পাল্টে কমিটিসহ মার্কেটে আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ওই দুষ্ট্রচক্রের মদদে বিনা নোটিশে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এতে করে চাঁদনী চক মার্কেটের ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। পরাজিত শক্তির রেলিয়ে দেওয়া বহিরাগতদের অব্যাহত দখলদারিত্বের মহড়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সংগঠনের সদস্যপদ হারানো একজন ব্যক্তির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে এই প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদপ্তর এভাবে কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসাতে পারেন না।
আজ ৫ জানুয়ারি (রবিবার) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন হাওলাদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আমীর হোসেন রোমান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালে চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত হয়ে আমরা মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একটা প্রতিপক্ষ আছে, যে প্রতিপক্ষ কখনো নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে বিজয়ী হতে পারেনি। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কারণে তারা কিছু বহিরাগত লোকজন এনে সবসময় মার্কেটে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই আমাদের ৩ বছর মেয়াদী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আমাদের প্যানেলের ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পাস করে। তখন প্রতিপক্ষরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সেই ফলাফল মেনে নেয়। কিন্তু ২০২৪ সালে সরকারের পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর অন্যায়ভাবে আমাদের কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। আমাদের কমিটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, ওনারা (সমাজসেবা অধিদপ্তর) অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মনগড়া একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আমাদের কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এটা করা হয়েছে আইন বহির্ভূতভাবে। আমাদের ভোটার ৬০০ এর মতো, এর মধ্যে ৪০৯ জন সদস্য লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা প্রশাসক চান না, নির্বাচিত কমিটি দ্বারা মার্কেট পরিচালিত হোক সেটাই চান। এ কারণে প্রশাসককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
নিজাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে চলে গেছে। আদালতের কাছে আমরা ন্যায্য বিচার চাই। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অবৈধভাবে আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়েছে। এটা যেন প্রত্যাহার করে নির্বাচিত কমিটিকে মার্কেট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেটাই আমাদের মূল দাবি।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত হওয়া ইসরাইল নামের একজন ব্যক্তি বহিরাগতদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মার্কেটে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় চাঁদনী চক বিজনেস ফোরাম থেকে তার সদস্যপদ স্থগিতও করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পট পরিবর্তন হওয়ার পর তার সুযোগ নিয়ে সদস্যপদ স্থগিত হওয়া ওই ব্যক্তি নিজের লেবাস পাল্টে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তার ভিত্তিতেই পুরো কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কিসের ভিত্তিতে আপনারা বলছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর অবৈধভাবে আপনাদের কমিটি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমাজসেবার একটা আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী তারা কমিটি ভেঙে প্রশাসক বসাতে পারে না। তাছাড়া আমাদের সংগঠনের সদস্যপদ হারানো একজন সমাজসেবার কাছে আবেদন করেন তার সদস্যপদ বহাল রাখার জন্য। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তর তার সদস্যপদ বহাল রাখার জন্য আমাদের কিছু না বলেই এমনকি কোনো নোটিশ প্রদান না করেই পুরো কমিটি ভেঙে দিয়েছে। এটা তো সমাজসেবা অধিদপ্তর করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, চাঁদনী চকে প্রায় ৬০০ দোকান মালিকের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ৫-১০ জন দোকান মালিকের সহায়তায় সমাজসেবার এক-দুইজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অসত্য তদন্তের ভিত্তিতে নির্বাচিত কমিটি বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগের এই ধ্বংসের খেলা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজসেবার বিধি অনুযায়ী দ্রুত আমাদের নির্বাচিত কমিটিকে যেন মার্কেট পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও যে সব দাবি জানানো হয়েছে, তা হলো- ১. ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ থাকলে সাধারণ দোকান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসায়ীরাই তার সমাধান করবেন। ২. ব্যক্তি মালিকানা মার্কেট পরিচালনা কমিটি মালিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিতরাই পরিচালনা করবেন। প্রশাসক নিয়োগ সাধারণ দোকান মালিকরা কখনই চান না। ৩. প্রশাসক মুক্ত, বহিরাগত মুক্ত করে মার্কেট পরিচালনার দায়িত্ব দোকান মালিকদের হাতেই রাখতে হবে। ৪. নির্বাচিত কমিটিকে মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত স্বাধীনভাবে মার্কেট পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। এবং ৫. মার্কেট পরিচালনা কমিটি দোকান মালিকদের একটি অ-রাজনৈতিক মার্কেট পরিচালনা কমিটি। আমরা এখানে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অজুহাতে মার্কেট দখলের পাঁয়তারা হতে নিরাপত্তা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম শেখ, কোষাধ্যক্ষ মো. জয়নাল আবেদীন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক রিপন, সহ-কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহিম, ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক চিশতী, দপ্তর সম্পাদক জামাল আহমেম্মদ মাসুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঠিকানা/এসআর