* গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার, আহত ছাত্রজনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ অনুমোদন
* বাংলাদেশে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে ড. ইউনূসকে অস্ট্রেলিয়ার ৪১ এমপির চিঠি
* সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ অনুমোদন
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার কথা পুনর্বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সাক্ষাতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা, দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ড. ইউনূস দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকেও ডেকে সংযত না হলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এ সময় তারা সংযত হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও পদত্যাগে নিজের ইচ্ছের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তবে উপস্থিত উপদেষ্টারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন সরকারপ্রধানকে।
এনসিপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে যমুনায় প্রবেশ করেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর কিছুক্ষণ পর তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়।
জানা গেছে, ড. ইউনূস এখন কী করবেন? তার সামনে বিকল্প খুবই কম। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার নেতৃত্ব অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে। হয় তিনি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, না হয় পদত্যাগ করে চলে যাবেন। এ সময় নাহিদ তাদের কোনো ধরনের ভুলত্রুটি থাকলে তা ক্ষমা সুন্দর সৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে সরকারকে আকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সব শক্তি আপনার সঙ্গে রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তার পাশাপাশি তার পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে বাংলাদেশে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ৪১ জন সংসদ সদস্য। চিঠিতে অস্ট্রেলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট ও সময় বেঁধে দেওয়া নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ, ‘মনসুন বিপ্লব’র ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ ও এনসিপিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুর্নবাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে বৈঠকে। খসড়াটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। বৈঠকে সম্পূরক বিষয়ে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক উপস্থাপিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, বাস্তবায়নযোগ্য হলে বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময়সীমা এবং বাস্তবায়নের প্রভাব বা সংশ্লেষের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ দফাওয়ারি মতামত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবে।
এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তার মতপার্থক্যের কথাও জানিয়েছেন। গত বুধবার সব স্তরের সেনা-কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। যেটা প্রফেসর ড. ইউনূস কখনো স্পষ্ট করেননি। তার উপদেষ্টারা সবসময় পানি ঘোলা করেছেন। তিনি ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছেন। বারবার দাবি তোলা সত্ত্বেও তিনি বিষয়টি খোলাসা করেননি। তবে সেনাপ্রধান ২০২৬-এর জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচিত সরকার দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে, এনসিপি দাবি তুলেছে অন্তত তিনজন উপদেষ্টাকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেন- ড. সালেহউদ্দিন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. আসিফ নজরুল। তাদের ভাষায় এরা সবাই বিএনপির সমর্থক। অথচ অভ্যুত্থানে আসিফ নজরুলই ছিলেন সামনের কাতারের এক কৌশলযোদ্ধা।
বিএনপি বলছে, সরকারের ভেতরে এনসিপির যে দুজন উপদেষ্টা রয়েছেন তাদেরকেও পদত্যাগ করতে হবে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে নিরপেক্ষতার স্বার্থে পদত্যাগ করতে হবে। আরও তিনজন উপদেষ্টা আছেন তারা এখন মুখ লুকাচ্ছেন। এর মধ্যে একজন আছেন পারিবারিকভাবে বিএনপির সমর্থক। হালে তিনি রং বদলিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একটি সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে। অস্বস্তি নিয়ে কি প্রফেসর ড. ইউনূস দায়িত্ব পালন করতে পারবেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। ড. ইউনূসকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে যারা মসনদে বসিয়েছিলেন তারাই বা কী করবেন? এই প্রশ্নের হিসাব মেলাতে আরও ক’দিন সময় লাগবে।