বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ রেখে আইন সংশোধনে কষ্ট পেয়েছেন ফলকার!  
মানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, কাজটি ঠিক হয়নি। গেলো সোমবার (১৬ জুন) জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৯তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ উদ্বেগের কথা জানান ফলকার। তার মতে, ‘এটা অন্যায্যভাবে সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমবেত হওয়ার স্বাধীনতাকে সীমিত করবে।’ তার কথা এতোটুকুই? 
না, আরো আছে, আরেকবাক্যে বলেছেন, ‘...তবে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে অগ্রগতি হচ্ছে। ...আমি সংস্কারের ক্ষেত্রে অর্থবহ অগ্রগতির আহ্বান জানাচ্ছি, যেন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা যায়।’ এসব কথার মানে কী? কেন একেকবার একেক কথা? কোনটা খাস কথা? কখন কোনদিকে?
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গত ১২ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়। তা তো সবারই জানা। সমর্থনও ছিল ব্যাপক। এখন কেনো ভিন্ন কথা? 
ফলকার তুর্করা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। শেখ হাসিনার সরকারতে হটাতে বেশ অবদান রাখা ফলকারকে ডিপ স্টেটের অংশীজনও মনে করা হয়। গেলো সরকার পতনের পর তার পরামর্শ ছিল  ’শেখ হাসিনা ও অন্যান্য পালিয়ে থাকা অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে ইউনিভার্সেল জুরিডিকশন প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠানো যেতে পারে’। বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন প্রধান হিসেবে এটি ছিল ফলকার তুর্কের প্রেসক্রিপশন। এখন কেন হেরফের? ভিন্ন উপলব্ধি?  না-কি মোহভঙ্গ?
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের একমাস পর হঠাৎ তার এই অনুভূতির রহস্য খোঁজার লোকের অভাব নেই। এতদিন পর কেনো আইন করে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধে উদ্বেগের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথাও বলেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন কি অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে?
এ প্রশ্ন ও ন্যারেটিভ তো আছেই। লন্ডনের যৌথ ঘোষণার পর, এই বিবৃতি ডিপ স্টেটের নতুন পরিকল্পনার ইঙ্গিত কি-না, সেই সমীকরণও আছে। গেলো মার্চেও এক কথায় কাউর বাধিয়েছিলেন ফলকার। বাংলাদেশ নিয়ে বিবিসির অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম, ফলে পরিবর্তন দেখলাম। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে দমন-পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করার পর সরকার পরিবর্তন হয়েছিল বলে জানান তিনি। ফলকারের ওই বক্তব্যের পর কীসব কথাবার্তা হয়েছিল, মনে আছে তো?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।  
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 মোস্তফা কামাল  
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
