নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য নতুন করে ১৪৭টি রাজনৈতিক দল তাদের আবেদন জমা দিয়েছে। জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে এই আবেদন জমা পড়ে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ১০ মার্চ আগ্রহী রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে। ২০ এপ্রিল ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা পড়ে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দলের। পরবর্তী সময়ে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের পার্টি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও ৪৫টি দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানালে ইসি দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিয়ে নতুন তারিখ ২২ জুন নির্ধারণ করে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে আরও ৫২টি দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা পড়ে।
ইসি প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এনসিপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশনে দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক, মুখ্য সংগঠকসহ বেশ কয়েকজন নেতা। সেখানে নেতারা সাংবাদিকদের সামনে কিছু কথা বলেন। তারা জানান, নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করে এমন সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তারা এ-ও জানান, শাপলা প্রতীককে অগ্রাধিকার দিয়ে আরও দুটি প্রতীকের বরাদ্দও চেয়েছেন। তাদের নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ করে ইসি অনুমোদন দেবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সাংবাদিকদের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তারা এ কথাও বলেন, বর্তমান ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে হাতি প্রতীক নিবন্ধন চেয়ে ইসিতে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পেতে সভাপতি হিসেবে আবেদন করেছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিএনপি নেতা ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। এ রকম অন্যান্য দলের পক্ষেও নানা প্রতীক চেয়ে এমন আবেদন করেছেন পরিচিত, স্বল্পপরিচিত বা অতিপরিচিত অনেকেই।
নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ জুন সংখ্যা ঠিকানার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘১৪৭টি দলের নিবন্ধন আবেদন, রাজনৈতিক দলের বাম্পার ফলন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে বহুবিধ নাগরিক আলোচনার মধ্যে এই প্রতিবেদনটিও আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। প্রবাসেও এ নিয়ে নানা আসরে প্রবলভাবে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ ফসল উৎপাদন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের দিক থেকে অতি উর্বর ভূমি। এবার রাজনৈতিক দল উৎপাদনেও বাংলাদেশ একটি রেকর্ড গড়ল এবং সম্ভবত উৎপাদনের ইতিহাসে গিনেস বুক অব রেকর্ডে স্থান করে নেবে। তবে এ ইতিহাস বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের নাম কতটা উজ্জ্বল করবে, কে জানে! বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েও তার অনেক সন্তানকে অর্ধাহারে, না খেয়ে থাকতে হয়। মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বা পঞ্চম দেশ হওয়া সত্ত্বেও লাখো মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে।
বাংলাদেশে ৫ আগস্টের আগে যে কটি দল ছিল এবং পরে যতটা দল আছে, তাদের নিয়েই রাজনৈতিক হানাহানি, রক্তারক্তির শেষ নেই। রাষ্ট্রকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অতীতে দেখা গেছে, দলের মধ্যে হানাহানি, অনৈক্য, বিভেদ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলার প্রবাদ : ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।’ তাই আশাবাদী হতে ভয় হয়।