ফিলিস্তিনে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিহত ২০ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক সাইফুল্লাহ মুসাল্লাতের পরিবারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
পরিবারের দাবি, গত ১১ জুলাই (শুক্রবার) দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা সাইফকে ঘিরে রাখে এবং তাকে নির্মমভাবে মারধর করে। এ সময় আহত অবস্থায় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা চিকিৎসাকর্মীদেরও আক্রমণ করা হয়।
পরিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “সাইফ একজন সদয়, পরিশ্রমী ও সম্মানিত তরুণ ছিলেন, যে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। এটা এক অচিন্তনীয় দুঃস্বপ্ন ও অবিচার, যা কোনো পরিবারকে কখনও যেন সহ্য করতে না হয়।”
তারা আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি—এই ঘটনায় অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা হোক এবং যারা সাইফকে হত্যা করেছে, সেই বসতি স্থাপনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
এ পর্যন্ত মার্কিন সরকার ইসরায়েলি বাহিনী বা বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা নিহত মার্কিন নাগরিকদের মৃত্যু তদন্তে অনীহা দেখিয়েছে। তারা বরাবরই দাবি করেছে যে, ইসরায়েল নিজেরাই এসব ঘটনা তদন্তে সক্ষম।
কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব তদন্ত খুব কম ক্ষেত্রেই বিচারিক ব্যবস্থা পর্যন্ত পৌঁছে, যদিও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, “বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
তবে গোপনীয়তার কারণে তারা মুসাল্লাতের পরিবারের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৯ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরার প্রখ্যাত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। কিন্তু কোনো হত্যাকাণ্ডেই কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
আরব-বিরোধী বৈষম্যবিরোধী কমিটি (এডিসি) এক বিবৃতিতে বলে, “মার্কিন সরকারকে এখনই স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে, ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিকদের জীবনকে আর কখনোই অবহেলা করা হবে না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ফ্লোরিডার বাসিন্দা সাইফ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে পশ্চিম তীরে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখনই অবৈধ বসতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় ইসরায়েলি বসতকারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।”
আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন (এএমপি) প্রশ্ন তোলে, ট্রাম্প কি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন, নাকি আবারও ইসরায়েলের স্বার্থেই মাথা নোয়াবেন?
তারা আরও বলে, “সাইফ আমেরিকান নাগরিক হলেও শুধু নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নয়—মানবাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির হত্যার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, ইসরায়েল প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা পায় এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রায়ই মার্কিন ভেটো ব্যবহার করে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) জনসাধারণকে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
তাদের ভাষ্য, “এটা কোনো একক ঘটনা নয়। বরং দীর্ঘদিনের অপরাধমুক্ত সহিংসতার অংশ যেখানে মার্কিন নাগরিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।”
মানবাধিকার সংগঠন ডিএডব্লিউএন-এর প্রধান সারা লিয়া উইটসন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে যে আইনগত উপায় আছে, তা ব্যবহার করলেই সাইফ হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব। কিন্তু মূল সমস্যা হলো—ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।”
তিনি সতর্ক করেন, “এই নীরবতা একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত তৈরি করছে—যেখানে ফিলিস্তিনিদের মতো মার্কিন নাগরিকদের ওপরও উন্মুক্তভাবে সহিংসতা চালানো হচ্ছে, কিন্তু কেউ জবাবদিহির আওতায় আসছে না।”
ঠিকানা/এসআর