দিল্লিতে আসন্ন জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণের জন্য জোট সদস্যদের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নয়টি দেশের সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে শুধু বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন ২০২৩-এ বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে ফলোআপ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব। সেখানে তিনি বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে কথা বলেন। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের তিস্তা ওয়াটার শেয়ারিংয়ের যে বিষয়টি আছে, সেটি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী রেইজ করবেন। আমাদের প্রায় ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদী আছে। গ্যানজেস ওয়াটার ট্রিটিসহ সব বিষয়ে আমাদের জয়েন্ট রিভার কমিশনে আলোচনা চলছে। হাইয়েস্ট পলিটিক্যাল লেভেলে আমরা সবসময় তিস্তার হিস্যা নিয়ে আলোচনা করে এসেছি, আলোচনায় রেখেছি। এবারো আশা করি প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ সেপ্টেম্বর সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত নিশ্চিতকৃত সূচি অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনের আগে দেশের বাইরে এটিই হবে তার সর্বশেষ সফর।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর নিয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে ধন্যবাদ জানাই। দক্ষিণ এশিয়া থেকে তারা শুধু আমাদেরই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাই আমরা অনেক সম্মানিত।’
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকারপ্রধানদের মধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো শেষ মিনিটে চূড়ান্ত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। তারা আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।’
নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকটির তাৎপর্য অনেক বেশি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে। আবার একই ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে চীনের বৈরী দেশ ভারতকে। এ কারণে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপড়েন প্রশমনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারে ভারত।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরের ওপর দৃষ্টি রাখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের চলমান টানাপড়েন নির্বাচনের আগে প্রশমন হওয়া জরুরি। আসন্ন দিল্লি সফর থেকে এমন প্রত্যাশাই থাকবে তাদের। উল্লেখ্য, ‘১৮তম জি২০ হেড অব স্টেট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট সামিট’ অনুষ্ঠিত হবে দিল্লির ইন্ডিয়া ট্রেড প্রমোশন অর্গানাইজেশন (আইটিপিও) কমপ্লেক্সে।
ঠিকানা/এম