জিয়াউদ্দিন বাচ্চু
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ মুসলিম-জুইশ যুদ্ধ নয়। এটা তাদের অস্তিত্বের লড়াই। ইসরায়েলিরা চায় তাদের স্থিতিশীল ভূখণ্ড, দেশ ও জাতির স্বীকৃতি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা চায় তাদের ন্যায্য ভূখণ্ড ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। উভয়েই যুগ যুগ ধরে তাদের অমীমাংসিত ভূমির জন্য যুদ্ধ করছে এবং প্রতিদিন তাজা রক্ত ঝরাচ্ছে, যা বিশ্ব বিবেক নীরবে উপভোগ করছে। বিশ্বের ১ থেকে ২ শতাংশ জঙ্গি মৌলবাদী হিন্দু, মুসলমান, জুইশ সমগ্র পৃথিবীকে ১৪২০ বছরের আগেকার ধর্মযুদ্ধের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে পুতিন, কিমের মতো আধিপত্যবাদী যুদ্ধবাজ বিশ্বকে আতঙ্কিত ও দ্বিধাবিভক্ত করে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মানুষের বেঁচে থাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানবসভ্যতা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জন্য অবাধে বিশ্ব বিচরণ অবাঞ্ছিত হতে চলেছে। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, নির্ভরশীলতা, আস্থা, সম্প্রীতি, সহযোগিতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বিপরীতে পরস্পরের প্রতি আক্রোশ, অবিশ্বাস, অনিশ্চয়তা, অসহযোগিতা, নিরাপত্তাহীনতা ও ঘৃণা বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে ইরাকে জীবাণু অস্ত্রের তল্লাশি। আধিপত্যবাদ সাদ্দাম হোসেনকে প্রতিহত করার স্বার্থে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাক আক্রমণের প্রাক্কালে বুশ-ঘোষিত বিরামহীন তারকাযুদ্ধÑসকল সন্ত্রাসবাদ, আধিপত্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ও জঙ্গি মৌলবাদী চক্রকে পরাস্ত করে বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি ও স্বাধীনতার বিজয় পতাকা ছিনিয়ে এনে বিশ্বকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। প্রেসিডেন্ট বুশের এই বিশ্বায়নের মূলমন্ত্র সমগ্র পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ সমর্থন করেছিল।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, বিশ্বনেতাদের কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মানুষের জন্য মুক্ত ও নিরাপদ বিশ্ব প্রতিষ্ঠা তথা বিশ্বায়নের গতিশক্তি ঝিমিয়ে যাচ্ছে। মানবসভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন। বিশ্বায়নের মূল হোতা একমাত্র মহাপরাশক্তি, বিশ্বকে নেতৃত্ব দানকারী আমেরিকা ছিল তৃতীয় বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের স্বপ্নের সোনার হরিণ; যেখানে ছিল মানবতা, স্বাধীনতা ও শান্তির মুক্তাঙ্গন এবং আমেরিকানরা ছিল বিশ্বের স্বাধীনতা, মুক্তি ও শান্তির প্রতীক। কিন্তু আজ কেন তারা দিন দিন সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ও অপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ব বিচরণ তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
যে মুহূর্তে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন পিছিয়ে থাকা উন্নয়নশীল দেশ ও জাতি তাদের বিনা আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদ, দেশের উর্বরতা ও মেধাশক্তি আহরণের জন্য অধীর আগ্রহে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, চীন, জাপান ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ও মূলধনের সহায়তার আশায় লাল গালিচা অভ্যর্থনা দিয়ে বুকে তুলে নিতে অপেক্ষা করছে, সেই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, আফ্রিকা, এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, একনায়কতন্ত্র ও আধিপত্যবাদ কায়েমকারী শাসকগোষ্ঠী সুকৌশলে নিজেদের স্বার্থে শান্তিপ্রিয় মানুষের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করে শাসন, শোষণ ও নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে।
অতীব দুঃখের বিষয়, ইউএনও, ইইইউ, গ্রুপ-৭, ন্যাটো, ওআইসি, এইউ, আমেরিকা, লন্ডন, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি সংগঠন ও উন্নত দেশসমূহ এই মানব হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বা এর সুরাহা না করে কেউ কেউ তাদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উসকানি বা সহযোগিতা করছে। মানবসভ্যতা এবং নতুন প্রজন্ম আজ উপেক্ষিত।
পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ এবং নতুন প্রজন্ম আর কখনো হিরোশিমা-নাগাসাকি বা এই মানবহত্যা দেখার জন্য প্রস্তুত নয়। তাই আজ বিশ্বে অস্ত্রের ঝনঝনানি রোধ করে এবং অন্য আরও কাউকে পরাশক্তি না বানিয়ে বিশ্বের অমীমাংসিত বিষয়সমূহ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে মিটিয়ে ফেলতে হবে। নিরাপদ বিশ্বায়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করা, পিছিয়ে থাকা সকল দেশকে সহায়তা, অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, মানবজাতির অধিকতর কল্যাণ, চূড়ান্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সবাই এক হয়ে গ্রহ থেকে গ্রহে ছুটে বেড়ানোর জন্য সকল সন্ত্রাসবাদ, আধিপত্যবাদ ও উগ্র মৌলবাদী শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি ও স্বাধীনতার বিজয় পতাকা ছিনিয়ে আনা এবং সমগ্র বিশ্বকে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া বুশ-ঘোষিত বিরামহীন তারকাযুদ্ধই হোক আজকের একমাত্র আন্তর্জাতিক কর্মসূচি।
-ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক
                           
                           
                            
                       
    
 
 


                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
