সুচিকিৎসক রবীন্দ্র কুমার দাসের সুযোগ্য সন্তান ডা. রথীন্দ্র কুমার দাস। ফেঞ্চুগঞ্জের কৃতীসন্তান, যাঁকে এলাকাবাসী তিন শব্দের নামকে তিন অক্ষর দিয়ে ‘আর কে দাস’ হিসেবে সম্বোধন করত। কুশিয়ারার পললস্নাত মাটির অনুরাগে আপন মহিমায় স্বনামে সুখ্যাত এবং অনিঃশেষ ভালোবাসার আবরণে অনশ্বর হয়ে আছেন ফেঞ্চুগঞ্জবাসীর হৃদয়ের অন্তস্তলজুড়ে। প্রয়াত হয়েছেন ১৬ জানুয়ারি ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে, বয়স যখন মাত্র ৫৭ বছর। জন্ম ফেঞ্চুগঞ্জের ফরিদপুর গ্রামে ২৭ জুন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে গর্ভধারিণী স্নেহময়ী মা প্রতিভা দাসের কোলে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আর কে দাসকে নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক লেখা লিখতে বসেছি। কী লিখব আর কী লিখব না, তা ছাড়া কী দিয়ে আরম্ভ করি, তা নিয়েও উৎকণ্ঠা। তৎকালীন তিন ইউনিয়নের ছোট্ট একটি থানা থেকে বর্তমানে পাঁচ ইউনিয়নের উপজেলা। ইউনিয়নের সংখ্যা বাড়লেও তার ভূখণ্ডের সীমানা পূর্বের ন্যায় অসম্প্রসারিত। বাংলাদেশের অন্যতম ছোট্ট একটি উপজেলা স্বনামে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। তাই তাঁকে নিয়ে আমার স্মৃতিচারণা ফেঞ্চুগঞ্জের সীমানা অতিক্রম না করেই। তার কিছুটা ব্যতিক্রম প্রয়োজনবোধে হতে পারে।
আমার প্রয়াত চাচা সৈয়দ মোহাম্মদ আলী (লালু মিয়া) ছিলেন ডা. আর কে দাসের ক্লাসমেট। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা দুজনই কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর কে দাসের পিতা ডা. রবীন্দ্র কুমার দাসের সুপরিকল্পিত পরামর্শ নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হলেন আর লালু চাচা এমসি কলেজে অব্যাহত থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ওই কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। রথীন্দ্র কুমার দাস পিতার আশীর্বাদ নিয়ে চলে গেলেন ঢাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। দীর্ঘ ছয় বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানের নির্ধারিত পাঠ্যসূচির অনুশীলন শেষ করে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে প্রত্যাবর্তন করলেন ফেঞ্চুগঞ্জস্থ পিত্রালয় ‘রবীন্দ্র নিকেতন’-এ। কিছুদিন সরকারি কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনেকটা পিতার পথকেই অনুসরণ করলেন। তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার হিসেবে নিজেকে চিকিৎসাসেবায় নিজের এলাকায় অধিষ্ঠিত করে নিলেন। পিতার ন্যায় চিকিৎসা পেশাকে কেবল জীবিকার প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দুস্থ মানবতার সেবায়ও আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
সেই সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আমরা যারা তারুণ্যের উচ্ছলতায় উচ্ছলিত ছিলাম, তখন ডা. আর কে দাস আমাদের কাছে ছিলেন অভিভাবকের ভূমিকায়। যেহেতু আমার চাচা লালু মিয়ার সহপাঠী ছিলেন, সেহেতু আমাদের বাড়ির সবার সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। রথীন্দ্র বাবুর পিতামশাই রবীন্দ্র বাবুও আমার দাদা মরহুম সৈয়দ রিয়াছত আলীর সঙ্গে ছিল মধুর সম্পর্ক। পারিবারিক সূত্রে জানা কথা, কোনো চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য লোক পাঠালে কোনো কোনো সময় কোনো ভিজিট নিতেন না। আমিও ছিলাম ডা. রথীন্দ্র কুমার দাসের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী। প্রেসক্রাইব করার জন্য ফি নিতে না চাইলেও ফি নিতে বাধ্য করতাম। আমাদের বাড়িতে এলে আমার মাকে না দেখে এক কাপ গরম চা পান না করে কখনো চলে যেতে দেখিনি। চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠছে তাঁর হাতে থাকা রুপালি রঙের সেই এভারিটি টর্চলাইট। হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায় টর্চলাইটের আলোয় টিলা বেয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকছেন নতুবা গল্পের আড্ডা শেষে নিজ গৃহে ফিরছেন।
ডা. আর কে দাস ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন। সিলেট এমসি কলেজে পড়ার সময় থেকে রাজনীতির অঙ্কুর তারুণ্যের উদীয়মান মননে প্রোথিত হতে শুরু করে। গোলাপগঞ্জের প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম ইকবাল চৌধুরীর সঙ্গে এমসি কলেজে পড়েছেন বিধায় ছাত্ররাজনীতির উষ্ণ পরশ তাঁর মননকে কম-বেশি স্পর্শ করেছিল। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে এমসি কলেজে লেখাপড়া করেছেন। কর্নেল তাহের তখন তাঁদের চেয়ে দু-এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। ডা. রথীন্দ্র কুমার দাস ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী থাকার সময় থেকে ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ন্যাপ থেকে বিদায় নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অবদানের কথা ভোলার নয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভারতের করিমগঞ্জ, শিলচর এলাকার শরণার্থী শিবিরের চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
মনে পড়ছে, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ফেঞ্চুগঞ্জে অনুষ্ঠিত একুশ উদ্্যাপনের কথা। তখনকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন মো. ইসহাক ভূঁইয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ১৩ বছর হয়েছে মাত্র। সেই সময় ফেঞ্চুগঞ্জে প্রথমবারের মতো সম্মিলিত উদ্যোগে একুশ উদ্্যাপিত হয়েছিল। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল নজিরবিহীন সার্থক অনুষ্ঠান, যা অদ্যাবধি অদ্বিতীয় হয়ে আছে। সেই সুবৃহৎ একুশ উদ্্যাপন পরিষদের সেক্রেটারি ছিলেন ডা. রথীন্দ্র কুমার দাস। কমিটির এই পদে সক্রিয় ছিলেন বলেই সার্থকরূপে অনুষ্ঠানটি করতে পেরেছিলাম। ওইদিন উপলক্ষে ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাম আজাদ সম্পাদিত ‘শিখা অনির্বাণ’ নামে বিশেষ সংকলনও প্রকাশিত হয়। সহযোগী সম্পাদনায় ছিলাম আমিসহ ফয়জুল ইসলাম মানিক ভাই, রিয়াজ উদ্দীন ইসকা ও তৈমুর হোসেন বিপুল। ওই সংকলনে ডা. আর কে দাসেরও একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘একুশ ও আমি’। সর্বসম্মতিক্রমে সংকলনটি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক প্রয়াত বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীকে উৎসর্গ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে বঙ্গবীর ওসমানী ফেঞ্চুগঞ্জে এলে কোনো কোনো সময় আমাদের টঙ্গীতে পাবলিক মিটিং বসত। সেখানে যেকোনো উপায়ে ডা. রথীন্দ্র বাবুকে উপস্থিত থাকতে হতো। জেনারেল ওসমানীর কাছে রথীন্দ্র কাকা ছিলেন গোটা ফেঞ্চুগঞ্জের প্রিয় মানুষদের একজন, যাঁকে ছাড়া কোনো মিটিং জমে উঠত না। ফেঞ্চুগঞ্জের সর্বজনীন স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো প্রয়োজনীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন এবং সুচিন্তিত মতামত পোষণে কোনো ধরনের কার্পণ্য ছিল না তাঁর। ছিল না কোনো প্রকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া, যেসব জটিল সমস্যা দেখলে কিছু কিছু মানুষ কৌশলগত উপায়ে এড়িয়ে যান। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নিজ চেম্বারে রোগী দেখার কাজ শেষ করে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়তেন কোনো কোনো বাড়ির রোগী দেখার জন্য। কুশিয়ারার পারে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের দৈর্ঘ্য এক মাইলেরও অধিক। বাজারজুড়ে ব্যবসায়ীদের তিনি ছিলেন নিয়মিত চিকিৎসক। ছোট-বড়, গরিব-দুঃখী সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে ছিল তাঁর আন্তরিকতার নিপুণ বন্ধন। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত তাঁর চেম্বার ছিল পূর্ব বাজারে, যেখানে বসে তাঁর পিতা ডা. রবীন্দ্র বাবু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেন। তখনকার মফস্বলের ডাক্তারদের সাপ্তাহিক ছুটি নেই বললেও চলে। আর যদি তিনি স্থানীয় বাসিন্দা হন, তবে তো আর অজুহাতেরও জায়গা থাকে না। রাত গভীর হলেও মানবিক কারণে ঘুমকে উপেক্ষা করতে হয় পল্লির সহজ-সরল মানুষের জন্য। তাই বিবেকবান একজন চিকিৎসকের জন্য আরাম-আয়েশকে ছাড় দিতেই হয়। কোনো কোনো সময় মরণাপন্ন রোগীর জন্য গভীর রাতে দরজায় অপ্রত্যাশিত কড়ার শব্দে জেগে উঠে রোগীর বাড়িতে গিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। এমনকি ছুটির দিনেও ব্যক্তিগত দরকারি কাজ ফেলে দিয়ে অসহায় রোগীর পাশে দাঁড়াতে হয়। ড. আর কে দাসের বেলায় এসব ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার এবং তাতে তিনি ইতিবাচক দায়িত্ববোধের মাঝে মহত্ত্বের আনন্দকে উদ্্যাপন করতেন।
খুব ধূমপায়ী ছিলেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে খুব শৌখিন স্বভাবের লোক ছিলেন তিনি। সদালাপী ও সংস্কৃতিপরায়ণ ছিলেন বলে তখনকার যুবসমাজের সঙ্গে ছিল তাঁর সৌহার্দ্যপূর্ণ অবাধ বিচরণ। যাত্রানুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, বর্ষবরণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট, কবিতাপাঠের আসর সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। কবি দিলওয়ারকে নিয়েও রথীন্দ্র কাকার চেম্বারে আড্ডা দিয়েছি। আড্ডা দিয়েছি ফেঞ্চুগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ কালাম আজাদের সঙ্গে। সেই সঙ্গে আসর বসত লেখিকা তৈয়বুন্নেছার বাসায় অথবা ফরিজা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু ধরের তত্ত্বাবধানে। কবি দিলওয়ারের ফেঞ্চুগঞ্জের প্রতি অগাধ ভালোবাসার মূল কারণ হয়তো ওইসব গুণী বিদগ্ধজনের জন্য। কবি দিলওয়ারের লেখা ‘ফেঞ্চুগঞ্জে রোদ ওঠে’ শীর্ষক দুই পর্বের কবিতাদ্বয় হয়তো ওই ভালোবাসার উদ্রেক থেকে। কবিতার কিছু পঙ্্ক্তিমালা এখানে তুলে ধরলাম-
‘ফেঞ্চুগঞ্জে রোদ ওঠে
হাসি যেন কপোতীর ঠোঁটে-
যে বিহঙ্গী অরণ্যের বাসর শাখায় রাঙা মুখে
সঙ্গীর সঙ্গীতে শোনে, রক্তের তরঙ্গ দোলে বুকে।’
আমাদের কুশিয়ারা শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ‘কো শি গো’র ব্যবস্থাপনায় সংগীত বিদ্যালয় ‘দোয়েল সুরপীঠ’-এর সংগীত শিক্ষার্থী ছিল তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনইÑমধুমিতা দাস (মনি) ও অভিজিৎ কুমার দাস (জয়)। অভিজিৎ কুমার দাস বর্তমানে সিলেট নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ও মধুমিতা দাস (মনি) সিলেট জেলা বারের আইনজীবী।
মৃত্যু যেহেতু সবার জন্য অনিবার্য, সেহেতু একে মেনে না নেওয়ার কোনো উপায় নেই। এর পরও মরে গিয়ে কিছু মানুষ বেঁচে থাকে তার মহৎ কাজের জন্য মানুষের মাঝে। মানুষকে ভালোবেসে প্রাণের যে বন্ধন সৃষ্টি হয়, তাকে ছিন্ন করে চলে যাওয়া সহজ নয় বলেই কোনো মানুষই পৃথিবীর মায়া ছাড়তে চায় না। ডা. আর কে দাসের বেলায়ও এর কোনো ব্যতিক্রম দেখি না। তাঁর চাচাতো ভাই ভাস্কর রঞ্জন দাসের (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ) কাছ থেকে জানা যায়, রথীন্দ্র কাকার চিকিৎসা দেশের বাইরে হওয়ার প্রতি ছিল তাঁর অনীহা। কিন্তু মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁর কথা ও অভিব্যক্তিতে পরিষ্কার হতে লাগল, তিনি মানুষের মায়ার বন্ধনে আরও কিছুদিন বাঁচতে চান। তিনি নিজেই বললেন তাঁর হার্টের চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হোক। সম্মতি যখন দিলেন, তখন বাঁচার সে সময় ফুরিয়ে গিয়েছে। অপ্রত্যাশিত ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কক্ষে। অদৃশ্য হয়ে গেল চেনা পৃথিবী, স্তব্ধ হয়ে গেল ভালোবাসার মুখরিত সব কোলাহল। রবি ঠাকুরের পঙ্্ক্তিমালা দিয়ে শেষ করছি আজকের লেখাটি।
‘জীবনের কোন-একটি ফলবান্ খণ্ডকে
যদি জয় করে থাকি পরম দুঃখে
তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার
একটি তিলক আমার কপালে;
সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে ॥’
-নিউইয়র্ক, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪