শতবর্ষী নারী। ফলমূলের ব্যবসা করছেন। পথে বসে কাজ করেন। পরিশ্রমী বৃদ্ধা নারী। স্বাবলম্বী নারী। পরনির্ভরশীল নন, পছন্দ করেন না। রাসুলের নির্দেশ মেনে চলেন। ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দ করেন। মানুষ তার সঙ্গে কথা বলেন, সে রকম পরিচয় পান। অনেকেই এগিয়ে আসেন। সাহায্য করতে চান। তিনি অপারগ। পরিশ্রমের বিনিময়ে কিছু পান। সে সুখটুকু উপলব্ধি করেন। হাসিমুখে কথা বলেন, খুব গরমেও কাজ করেন। পথিককে আম-শসা-আমড়া ইত্যাদি কেটে দেন। আর এটাই ফজিলাতুন্নেসার যাপিত জীবন।
আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন, কোনো বয়স উল্লেখ করছি না, কাজ করছেন না। কাজ করবেনও না। পরনির্ভরশীল হয়ে থাকবেন। অন্যের অনুগ্রহ নিয়ে বাঁচবেন। গলগ্রহ হয়ে থাকবেন। কাজ করার প্রতিও অনীহা। অনেক বাহানা করেন। সমাজ তাদের বেকার বানিয়েছেÑএমনটি নয়। কাজ করার অনীহাই তাদের বেকারত্বের চাবিকাঠি। অলসতাই তাদের একমাত্র পুঁজি। অনেক বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলি। তাদের মনের কষ্ট বুঝতে পারি। সন্তান কোনো কাজেই মনোযোগী নয়। ঘরের ভেতরে বন্দী। অনেকে উপদেশ দেবেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিতও করবেন, এমন কোনো লক্ষণ নেই।
একান্তই নিজস্ব ভাবনা। ভুলও হতে পারে। সমাজে অশিক্ষিত বেকারের চেয়ে শিক্ষিত বেকার বেশি। অশিক্ষিতরা ঝটপট কাজে নেমে পড়েন। কোনো দ্বিধা করেন না। শিক্ষিতরা যথেষ্ট সময় নেন। পছন্দ না হলে কাজ করবেন না। বেকারত্বের মালা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করবেন (সবার কথা বলছি না)। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। মেধাবীদের স্যালুট জানাই। তবে পরিশ্রমী মানুষ মাত্রই জীবনে সফল হন। অনেক কিশোর-কিশোরী আছে, স্কুলে পড়াকালীন কাজে নেমে পড়ে। সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখে। সকালের সূর্য দেখেই দিনটি কেমন হবেÑঅনুধাবন করা যায়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবারই স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু নিজেকেই সম্মানিত করে না। আশপাশের মানুষগুলোকেও সম্মানিত করে। কাজ না করার অনেক কারণ থাকতে পারে। কাজ করব, জীবিকা অর্জন করব, পরমুখাপেক্ষী হব না-প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার, এই অধিকারের দায়িত্বটুকু সবার নিতে হবে। এখানে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড়, ধনী-গরিবের প্রশ্ন নেই। প্রতিটি মানবকে নিঃশর্তভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।
শতবর্ষী নারী। চার দেয়ালের ভেতর থাকবেÑএটাই স্বাভাবিক নিয়ম। ঘরের চৌহদ্দির বাইরে অবস্থান। একজন রাজনীতিবিদÑসমাজসেবক। চিকিৎসকÑসমাজসেবক। শিক্ষক-সমাজসেবক। একজন সরকারি অফিসার-সমাজসেবক। আরও অনেকেই আছেন, সাধারণের জন্য কাজ করেন, সমাজের কথা ভাবেন। এই বৃদ্ধা নারীকে আরও কিছু বলতে চাই। শুধুই একজন সমাজসেবক, আরও পরিচয় আছে-
পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও।
তার চেয়ে সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
আসুন, আমরা শতবর্ষী নারীর কথা ভাবি, যিনি এখনো একজন ব্যবসায়ী। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা উপেক্ষা করেন। ফলমূল বিক্রি করেন। বিরামহীন পথ চলছেন। আমরা পরিশ্রমী হই। আত্মনির্ভরশীল হই। মেহনতি হই। সমাজসেবক হই। শতবর্ষী নারীর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। নিজেদের অনুপ্রাণিত করি।
আপনি আমাদের সহস্র সালাম গ্রহণ করুন। সবার পক্ষ থেকে আপনাকে সালাম, ‘শতবর্ষী নারী ফজিলাতুন্নেসা’।
লেখক : ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।