সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসূল হযরত মুহম্মদ (স) বলেছিলেন, পবিত্র রযব বিশ^বিধাতা আল্লাহর মাস; সাবান মহানবী (স) এর মাস এবং রমাযান বান্দার মাস। তাই পশ্চিমাকাশে পবিত্র রযবের চন্দ্রোদয়ের সাথে সাথে আখেরী নবী (স) স্বয়ং আল্লাহুম্মা বারীক্লানা ফী রযবা ওয়া সাবনা ওয়া বাল্লীগনা রমযান [হে আল্লাহ আপনি আমাদের রযব এবং সাবানের আশীর্বাদ বা বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছিয়ে বা (হায়াত বাড়িয়ে) দিন)] এবং সাহাবীদেরও পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছিলেন। আখেরী নবী (স) সেই নির্দেশানুসারে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি শনিবার দিবাগত রাত পবিত্র রযবের চন্দ্রোদয়ের পর থেকে ( পবিত্র রমাযানের চন্দ্রোদয় সাপেক্ষে ) আগামী ১১ মার্চ সোমবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাযের পূর্বে বা পরে দোয়াটি তেলাওয়াটি করবেন। আর পবিত্র রমাযানের চন্দ্রোদয়ের পর বিশ্ব মুসলিম সওম সাধানায় নিমগ্ন হওয়ার প্রত্যাশা রাখেন। পবিত্র হাদিসের বর্ণনানুসারে উল্লেখিত দোয়াটি তেলাওয়াত আরম্ভকারী কোন মুসলিম ভ্রাতা-ভগ্নী পবিত্র রমাযানের আগেই ইন্তেকাল করলে মহান আল্লাহতা’লা তাঁর বা তাঁদের আমলনামায় পুরো রমাযান মাসের সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। যাহোক, বাস্তুহারা ফিলিস্তিনী, ভ্রাতৃঘাতি সংঘর্ষে লিপ্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত বিশ্ব মুসলিমের সকরুণ অবস্থার সঠিক বর্ণনায় ভাষা হার মানতে বাধ্য। তাই অতলস্পর্শী পাপসাগরে নিমজ্জিতপ্রায় এবং জাগতিক মোহাবিষ্ট সর্বনাশা ধ্বংসের মুখোমুখি দন্ডায়মান বিশ্ব মুসলিমের জীবনে এবারের পবিত্র মাহে রমাযানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটুকু তা উপলব্ধি করার সবিনয় অনুরোধ রইল। মূলত প্রতিটি নফলকে ফরজের, প্রতিটি ফরজের গুরুত্ব ৭০গুণ বাড়িয়ে দেয়ার এবং ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত মুসলমানদের জন্য প্রতি বছরের মত এবারও রহমত, মাগফিরাত এবং জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণের সুমহান বার্তা নিয়ে পবিত্র মাহে রমাযান শুরু হচ্ছে আগামী ১১ ই মার্চ সোমবার । হে দয়াময় বিশ্বপ্রতিপালক, এবারের পবিত্র রমাযানের সাওম সঠিকভাবে পালন করা ও তাকওয়া অর্জনের তৌফিক আমাদের দান করুন। আমিন!
আরবী সাওম শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা বা পরিহার করা। শরীআতের পরিভাষায় পরম করুণাময় আল্লাহ তা’লার বিশেষ রহমত এবং পুণ্য হাসিলের প্রত্যাশায় একাগ্রচিত্তে সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যাতের সাথে সর্ববিধ পানাহার, হালাল স্ত্রীসম্ভোগ এবং জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে যাবতীয় অপরাধ পুরোপুরি বর্জন করার নামই সাওম বা রোযা। সাওমের প্রতি গুরুত্বারোপ প্রসঙ্গে বিশ^বাসীর অবিনশ্বর জীবনবিধান পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতা’লা বলেছেন : ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আ’মানু কুতেবা আলাইকুমুস্ সিয়ামু কামা কুতেবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন ( হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর। আশা যে তোমরা মোত্তাকী হবে (সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)। আখেরী নবী হযরত মুহম্মদ ( স) এর উম্মত ছাড়াও প্রত্যেক শরীআতে এবং পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের উম্মাতের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সাওম পালনের সুস্পষ্ট প্রমাণ উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অতএব, অনস্বীকার্য এবং অবিসংবাদিত যে প্রাপ্তবয়স্ক, সবল-সুস্থ প্রত্যেক নরনারীর জন্য সাওম পালন করা ফরয বা বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। পবিত্র হাদিসের ভাষায় সাওম অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফির হবে। আর কোন ধরনের যুক্তিসিদ্ধ ওযর ছাড়া শয়তানের প্ররোচনায় বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সাওম পালন না করলে সে ব্যক্তি ফাসিক ও গুনাহগার হবে। স্বীয় উম্মতদের জীবনে পবিত্র রমযানের সাওমের গুরুত্ব বর্ণনাকালে আখেরী নবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন যুক্তিসিদ্ধ ওযর কিংবা রোগ-ব্যাধি ছাড়া পবিত্র রমযানের একটি সাওম ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেবে সে রমযান মাস ছাড়া সারাজীবন সাওম পালন করলেও তা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগকৃত সাওমের ক্ষতিপূরণ হবেনা (তিরমিযী ও আবু দাউদ)। বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় জীবনবিধান পবিত্র হাদিসের ভাষায় : সাওম হচ্ছে ঢাল বা আত্মরক্ষার বর্ম স্বরূপ। মোদ্দাকথা, স্বার্থের মোহাবিশ্ব বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে সকল ধরনের অনাচার-অশ্লীলতা ও কুপ্রবৃত্তির অহর্নিশ হাতছানির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার ঢাল বা বর্ম হচ্ছে সাওম। মিতাচার-পরিমিত আহার ও তাকওয়ার সাথে সাওম পালন করলে পানাহারে নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন হয় এবং অতিভোজন এবং মুখরোচক খাবার গোগ্রাসে গিলার আসক্তি ও মোহমুক্তি ঘটে। যথাযথ নিয়মে সাওম পালনকারীগণ আর্থিক সাশ্রয় ছাড়াও অনাকাঙ্খিত রোগ-ব্যাধির হাত থেকে রেহাই পান। আবার পরিমিত ভোজনের ফলে সাওমপালনকারী সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং ঘাতক ব্যাধি হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টেরল, উচ্চরক্ত চাপসহ নানা প্রাণঘাতি রোগব্যাধির অনাকাঙ্খিত হামলা প্রতিরোধ করা যায়। একাগ্র চিত্তে সাওম পালনের ফলে মনুষ্যত্ববোধের উন্মেষ ঘটে, পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সৌভ্রাতৃত্ব এবং সৃষ্টির প্রতি সেবার মনেবৃত্তি জাগ্রত হয়। ভূরিভোজনে ও বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত বিত্তশালী সাওম পালনকারীগণ অর্ধভুক্ত, অভুক্ত ও অনাহারক্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর দুঃখকষ্ট হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারেন। ফলশ্রুতিতে হাড়কিপটে, পরহিতবিমুখ এবং আত্মকেন্দ্রিক সাওম পালনকারীরাও অভাবগ্রস্তদের দুর্দশা লাঘবে উদারহস্তে দানÑখয়রাতে বিশেষ তাড়না অনুভব করেন। তাকওয়ার সাথে সাওম পালন মানুষের ধ্যান-জ্ঞান ও চিন্তার জগতে আমূল পরিবর্তন আনয়ন করে এবং আত্মকেন্দ্রিকতার স্থলে বিশ্বজনীনতা, স্বার্থপরতার স্থলে পরার্থপরতা, ভোগ-লালসার স্থলে নির্মোহ সর্বোপরি অপরের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায় । উল্লেখ্য, সাওমের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহতা’লার সন্তুষ্টি এবং তাকওয়া বা ফরহেজগারী অর্জন করা। তাকওয়া প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ আয়াতে বলা হয়েছে ঃ লায়াল্লাকুম তাত্তাকূন ( যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার)। তাকওয়া মানে আল্লাহভীতি।বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর এবং আমরা সকলেই জান্নাত কামনা করি। তাই মানুষের অন্তরে আল্লাহর কঠোর শাস্তির ভয়-ভীতি সঞ্চারিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর অনুকম্পা লাভের বাসনা মনে জাগ্রত হলে শয়তানের প্ররোচনা কিংবা জাগতিক মোহ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারেনা। আবার ষড় রিপুর মোহ এবং জাগতিক অপরাধমুক্তির বহ্নিশিখা সাওম পালনকারীর অন্তরে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকায় তাকওয়া অর্জনও সহজসাধ্য হয়। তাই ধৈর্য অনুশীলন, ক্রোধ সংবরণ এবং আত্মসংযম এবং কৃচ্ছ্রসাধন সর্বোপরি তাকওয়া অর্জনের অভীষ্ট লক্ষ অর্জনে সাওম অব্যর্থ হাতিয়ার বললে বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি হবে না। শ্রুকিকটু শোনালেও বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বলতে বাধ্য হচ্ছি হরেক রকমের মজাদার মুখরোচক ইফতারি প্রস্তুতির মহড়া, রসনা বিলাস, টেলিভিশনে যৌন উদ্দীপক নাচ-গান উপভোগ, পরচর্চা, অন্যের প্রতি বিদ্বেষ কিংবা অহেতুক হিংসার মনোবৃত্তি পোষণ ইত্যাদি সাওমের কাঙ্খিত সাফল্য অর্জনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে।
তাই লোক দেখানের এবাদত-বন্দেগীর স্থলে রমাযানের প্রতিটি মুহূর্ত পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতসহ সকল ধরনের এবাদত-বন্দেগীতে কাটানোর শপথ নেয়া আমাদের প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য বললে অত্যুক্তি হবেনা।
পবিত্র আল কুরআনে সাওমের ফযীলাত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে : রমাযান এমন একটি তাৎপর্যমন্ডিত মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের অভ্রান্ত পথনির্দেশক, তাদের জন্য পার্থিব জীবনের বিধি-বিধান, আর হক এবং বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী আল কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেন সাওম পালন করে। ( সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)। তাই বলা যায়, পবিত্র রমযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এ মাসের মহিমা ও মর্যাদা অপরিসীম। মহানবী (স) এর ভাষায় আল্লাহ তা’আলা বলেন: আসসাওমু লী ওয়ানা আজজী বিহি অর্থাৎ সাওম কেবল আমারই জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দেব। ( সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসূল মুহম্মদ (স) আরও বলেছেন : যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আখিরাতের সাওয়াবের আশায় একাগ্রচিত্তে সাওম পালন করে তার অতীত জীবনের যাবতীয় সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় ( বুখারী ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেছেন: পবিত্র রমযান মাস পাওয়ার পরও যে ব্যক্তি তার অতীতকালীন গুনাহ (সগীরা) মাফ করে নিতে পারেনি সে নিঃসন্দেহে হতভাগ্য ও পোড়াকোপালে। পবিত্র রমযান মাস ধৈর্য অনুশীলন এবং সবর বা আত্মসংযমের মাস। আর ধৈর্যধারণের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। পবিত্র রমযান মাসে মুমিনদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। কোন ব্যক্তি সাওম পালনকারীকে ইফতার করালে বিনিময়ে উক্ত ব্যক্তির সাওমের সমান সওয়াব পাবে। অথচ সাওম পালনকারীর সাওয়াবে বিন্দুমাত্র হেরফের বা কমতি ঘটবেনা। আবার পবিত্র রমযানে প্রতিটি নফল এবাদতকে অন্য সময়ের ফরজ এবাদত হিসেবে এবং প্রতিটি ফরজ এবাদতকে অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ এবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। সাওমের স্বাতন্ত্র্য ঃ সাওম বাহ্যিক পরিমাপ এবং বোধশক্তির অতীত বিশেষ শ্রেণীর এবাদত। প্রকৃত সাওমপালনকারী এবং লোক দেখানো সাওম পালনকারী বা মেকি রোযাদারের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয়ের সক্ষমতা চরম সূক্ষ্মদর্শী আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তাই রমযান মাসের প্রতিটি নফলকে অন্য মাসের ফরযের মর্যাদা এবং প্রতিটি ফরযের সাওয়াবকে কমপক্ষে ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আবার কোন কোন উত্তম কাজের পুণ্য ১০ গুণ, ৭০ গুণ, হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও মহান আল্লাহ প্রদান করেছেন। অথচ সাওমের ব্যাপারে হাউয়্যুল-কাইয়্যুম আল্লাহ বলেছেন, সাওম আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব (বুখারী ও মুসলিম)। বিশেষত ইফতারের পূর্ব মুহূর্তের দোয়া কবুলের প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ প্রদান করেছেন। তাই ইফতারের পূর্বমুহূর্ত আমরা যথাসাধ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তৎপর থাকব ইনশাল্লাহ! স্মর্তব্য : ফযীলাতের বিচারে পবিত্র রমযান মাসকে ৩ টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। অতএব, পশ্চিমাকাশে পবিত্র রমযানের চাঁদ উদয়ের সাথে সাথেই রহমতের অংশ শুরু হবে এবং যাবতীয় বদ-অভ্যাস সর্বাংশে বর্জনপূর্বক একাগ্র চিত্তে এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভে সক্রিয় হব ইনশাল্লাহ। উল্লেখ্য, কারও অজনা নয় স্বর্ণ অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু। বিশুদ্ধ স্বর্ণ খনিতে পাওয়া যায় না। খনি থেকে উত্তোলিত আকরিক বা ময়লাযুক্ত সোনাকে আগুনে বার বার পুড়িয়ে অ্যালয় বা খাদমুক্ত এবং বিশুদ্ধ সোনায় পরিণত করা হয়। তদ্রƒপ মানুষের অন্তরের গভীরতম প্রদেশস্থিত যাবতীয় পাশবিক প্রবৃত্তি, কাম-ক্রোধ-লোভ- ও ইন্দিয়ের সমূল উৎপাটন করেই আত্মার পরিশুদ্ধি আনতে ও তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আর সর্বজন স্বীকৃত যে ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত ও পাপসাগরে ডুবন্তপ্রায় মুসলমানদের পরিত্রাণ এবং তাকওয়া অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে একাগ্রচিত্তে সওম পালন। মানুষ দিশেহারা : ভুল-ত্রুটি আমাদের পার্থিব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মূলত চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবেই আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) এবং আদি মাতা বিবি হাওয়া (রা) স্রষ্টার হুঁশিয়ারি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন এবং চিরশত্রু শয়তানের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়েছিলেন। তাই আমাদের পক্ষে আল্লাহর রহমত ছাড়া আদম-হাওয়ার উত্তরসূরী হিসেবে আদমের চিরশত্রু শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিস্তার লাভ সম্ভব নয়। স্বার্থের ঘেরাটোপে আচ্ছাদিত বিশ^ চরাচরে আমরা প্রতিনিয়ত জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে শয়তানের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হচ্ছি এবং অতলস্পর্শী পাপসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। অবশ্য পশ্চিমাকাশে পবিত্র রমযানের চন্দ্র উদয়ের সাথে সাথেই বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহ তা’লা বেহেশতের সকল দরজা খুলে দেন, দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন এবং মানুষের চিরশত্রু শয়তানকেও শৃঙ্খলিত করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে আত্মসচেতনার অভাবে পবিত্র রমযান মাসেও পরচর্চা বা গীবতসহ সকল ধরনের পাপাচার থেকে আমাদের মুক্ত হতে পারছি না। আবার অনেকেই নানা অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালন না করে শয়তানের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করি। মূলত আল্লাহ অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী এবং শাস্তিদানে কঠোর। যাহোক, মৃত্যু যেমন অবধারিত এবং অলঙ্ঘ্য সত্য ; কর্মানুরূপ ফল এবং পাপানুরূপ শাস্তিও তদ্রƒপ অবধারিত ও অনস্বীকার্য। আর কবরে আমাদেরকে একাকীই আশ্রয় নিতে হবে এবং পার্থিব ক্রিয়া-কলাপের অনুপুঙ্খ জবাবদিহি অবশ্যই করতে হবে। এবারের পবিত্র মাহে রমযানকে জীবনের আখেরী মাহে রমযান জ্ঞান করে এখন থেকেই একাগ্র চিত্তে সাওম পালনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রত্যেকের উচিত। রমযান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে এবাদত-বন্দেগীতে কাটানোর এবং জীবনের পুঞ্জীভূত অপরাধ গুনাহ মার্জনার নিমিত্ত গাফুরুর রাহীম ও লাত্বীফুল খাবীর আল্লাহর দরবারে মিনতি জানাচ্ছি। হে আলিয়্যুল আজীম, রাহমানুর রাহীম- আমাদের প্রতি পবিত্র রমযানের বেহিসাব রহমত বর্ষণ কর। আমিন!
সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউ ইয়র্ক।