কেবল জিততেই হবে? কখনো হারা যাবে না? মুখে মুখে তো বলা হয়, খেলায় হারজিৎ থাকেই। কিন্তু, হারলেই বিশ্রি বিশ্রি যতো গালমন্দ। আর ট্রলের ধুম। হারের ব্যাখ্যা দিলেও মানতে মন চায় না। বাঙালির ক্রিকেট দর্শনটা এমনই। তারা নগদে সাফল্য চায়। জিতলে মাথায় তুলে নাচে। পরের কোনো ম্যাচে হারলে গুষ্ঠি উদ্ধার। গলায় জুতার মালা। পেশাদার এই জমানায় ক্রিকেটারদের কাজ হচ্ছে, ম্যাচ খেলা। ম্যাচ জেতা। তাদের জয় ছাড়া আর কিছু দেখতে নেই?
না নেই। তার ওপর প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আমেরিকার পর ভারতের কাছে কেন হার? জবাবে বলাও যায় না, আমেরিকার সাথে ক্রিকেট ম্যাচে জিতবো? তাদের কয়টা স্যাটেলাইট আছে জানেন? কয়টা সাবমেরিন আছে? আমাদের স্যাটেলাইট আছে মাত্র একটা, সাবমেরিনটাও পুরানো। এমন অবস্থায় আমেরিকার সাথে ক্রিকেটে জয়ের কথা ভাবাটা কি ঠিক? ভারতের বিপক্ষে পরাজয়ের বিষয়ে কি বলা যায় না যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তো স্বামী-স্ত্রীর মতো। স্বামী ভালো খেললে স্ত্রী কি শান্তি পায় না? সম্পর্কের গভীরতা চাইলে স্বামীর জয় তো স্ত্রীরও জয়! আমাদের মাননীয় সাকিব আমেরিকার নাগরিক। সেখানে তার বাড়ি-গাড়ি মিলিয়ে রমরমা অবস্থা। খেলায় হার মানা টাইগাররা তার মার্কিন বাড়িতে একটু মেহমান হয়েছে, তাও দোষ?
আমাদের ক্রিকেটাররা ভিআইপি। প্রায় সবাই কোটিপতি। তাদের সাধ-আহ্লাদ থাকতে নেই? বউ-বাচ্চা নিয়ে আমেরিকার থাকতে না পারুক, একটু ঘোরার ইচ্ছা তো আছে! এ নিয়ে নোংরা যতো কথাবার্তা। পারলে টাইগারদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ফেলে দেয়া হয়। সাকিব আল হাসানের পরিবার বেশ কয়েক বছর ধরেই বাস করছেন নিউইয়র্কে। সেখানেই এবারের বিশ্বকাপযাত্রা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। এর আগে ঘটা করে সাকিবের দেওয়া ডিনার পার্টিতে হাজির ছিলেন দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হারের দুঃখ ভুলতে নাসায়ও যায় টাইগাররা। ১ জুন এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা যুক্তরাষ্ট্রে উঠলেও এবারই প্রথম অংশ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ খেলেছে দেশটি। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে গো-হারা হারিয়ে রেকর্ড বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম দেখাতেই হেরে তুমুল সমালোচনায় পড়াই সাকিব-শান্তদের নিয়তি?
সিরিজে ফেরার ম্যাচের আগের দিন টাইগাররা চেষ্টা করেছে মনটা চাপমুক্ত রাখতে। একটু ঘুরতে বের হন তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, তাওহিদ হৃদয়রা। তারা এমন এক জায়গায় ঘুরতে গেছেন, যেখানে হাজারো ব্যর্থতার পর অবিশ্বাস্য এক আবিষ্কারের জন্ম হয়। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই অসাধ্যকে সাধন করার চেষ্টা করা হয়। চরম ধৈর্য্যরে পরীক্ষা নেওয়ার সেই জায়গাটি হচ্ছে- নাসা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার বিশ্লেষক মহসিন শেখও তাসকিন-হৃদয়ের সঙ্গে হিউস্টনে নাসার স্পেস সেন্টার ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউটে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে মহসিন খুবই খুশি। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। ফেসবুকে মহসিন লিখেছেন, ‘নাসায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে দারুণ লাগছে। কিছু ব্যর্থতা আপনাকে সংযম এবং প্রেরণা শেখাবে।’ এমন দশার মাঝেও স্বপ্ন দেখলে, বড় করেই দেখেন আমাদের সৌম্য সরকার। স্বপ্নে কিছু খেলে ডাল-ভর্তা কেন, পোলাও-কোরমাই তো খাবেন?
কেউ সেমিফাইনালের আশা করলে তিনি দেখেন ফাইনালের স্বপ্ন। বিশ্বকাপের ১৫ ক্রিকেটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিসিবির ‘দ্য রেড গ্রিন’ স্টোরিতে নিজের ইচ্ছার কথা জানান সৌম্য সরকার। মাঠে পারফরমেন্স খারাপ হলেও মন খারাপ করা যাবে না, পরাজয়ের মাঝেও খুঁজে নিতে হবে হ্যাপিনেস। শান্তর নেতৃত্বে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নতুন কিছু অর্জন করবে, আশা সৌম্য সরকারের। স্বপ্ন দেখতে বা আশাবাদী হতে সমস্যা কী? স্বপ্নটা দোষে রূপ না নিলেই তো হয়! কথায় কোনো ভেজাল আছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।