কতো যে কথা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে! যার এ বন্দরে কোনো কাজ নেই, বন্দর নিয়ে ভালো-মন্দ ধারণাও নেই, তারও যেনো দু’চার কথা বলতেই হয়। মানে বলার জন্যই বলা। তারা নিঃস্বার্থ, তবে নির্মোহ নন। বন্দর নিয়ে যারা ভালো জানেন-বোঝেন, তারা কম বলেন। আর ইন্টারেস্টেডরা বলেন না, তারা বলান। নিজেদের সুবিধার কথাটা অন্যকে দিয়ে বলান। এখানে এক পক্ষ বর্তমান ইজারাদারদের পক্ষে। তারা চায় না, সোনার ডিম পাড়া হাঁসটা অন্যের কব্জায় চলে যাক। আরেকপক্ষ কী চায়?
তাদের চাওয়া সামান্য। সামনে কাজটা বাগানো। দু’পক্ষই শক্তিমান, টাকার কুমির। সরকারের হার্ডকোরে কানেকটেড। বিশ্বের পোর্ট কনটেইনার ইনডেক্সে চট্টগ্রাম বন্দরের পজিশন বেশ নিচের দিকে। তবে, বাংলাদেশে নাম্বার ওয়ান। সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৭ সাল থেকে এই টার্মিনালের দায়িত্বে আছে। ২০১৫ সাল থেকে তাদের সঙ্গে যোগ হয় এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স এবং এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড। কোম্পানি তিনটিই বিগত সরকারের স্নেহধন্য। তা অন্যদের মাঝে হিংসা জাগায় না? জাগানোই স্বাভাবিক। তারওপর যোগ হয়েছে এ বন্দর পরিচালনার কাজ বিদেশিদের দেয়ার বিষয়। মজার এবং খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে- এর বিরোধিরা কেউই বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনার কাছে ভুক্তভোগী নন। আবার সরাসরি লাভবানও নন। বন্দর বিদেশিদের দিলে তাদের লাভ নেই, লোকসানও নেই। এক পিস সোনার ডিমও তাদের ভাগে জুটবে না। তারা তা চানও না। তাহলে বিরোধিতা কেনো?
এ বিরোধিতার পুরো কারণই তাদের চিরায়ত রাজনীতি। আর ভাগেযোগে লাভবানরা নমুনা দেখছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দর শেয়ারের একটা চুক্তি আছে। যেখানে তাদের জাহাজ এলে আগে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার ধারা আছে। এখন সেই বিশেষ সুযোগের কোনো ব্যত্যয় কি ঘটবে? ডিপি ওয়ার্ল্ডের মতো বিদেশি কোম্পানি এখানে যুক্ত হলে কী হবে? লাভের ভাগ কম-বেশি হবে?
হতেও পারে। লোকসানের তো কোনো পর্বই নেই। এ অঞ্চলে অন্য কোনো হাব হলে ক্ষতি কার? বাংলাদেশ কেন সোনাদিয়াতে গভীর সমুদ্রবন্দর করতে পারেনি? পুরা বন্দরের দায়িত্ব থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। ডিপি ওয়ার্ল্ড তাহলে কী করবে? তাদের দায়িত্ব শুধু টার্মিনালের কনটেইনার হ্যান্ডলিং। এর আগে পতেঙ্গা টার্মিনাল বিদেশি সৌদিভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালকে দেয়া হয়েছে। এবার ডিপি ওয়ার্ল্ড। ২০১৮ সাল থেকে চেষ্টা করছে তারা। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চুক্তি না হলে, তারা কেটে পড়বে। বিষয়টি পরিস্কার করছে না কেনো সরকার?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন,ঢাকা।