প্রবাসে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের ১৯ বা ২১ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থাকে একটি করে। কিন্তু কেউই এই দুটি পদের বাইরে থাকতে চান না। এ দুটি পদে দায়িত্ব নিতে চান সংগঠনের সবাই। ফলাফল যা হবার তাই। প্রথমে নেতৃত্বের কোন্দল, পরে ভেঙে যায় খোদ সংগঠনই। অথচ কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে পাওয়া যায় না অধিকাংশকেই।
অনেকে বলছেন, নেতাগিরি ফলানোর লোক আছে। কিন্তু কাজের বেলায় সবাই ঠনঠন।
সম্প্রতি চলতি সামারে বনভোজন আয়োজন নিয়ে শতাধিক আঞ্চলিক সংগঠনের বিভক্তি লক্ষ করা গেছে। একই সংগঠনের ব্যানারে পৃথক বনভোজন আয়োজন এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। অনেকে বলছেন, প্রবাসে ব্যাঙের ছাতার মত রাতারাতি সংগঠন গজিয়ে উঠছে। এসব সংগঠন ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া আরো কোনো কাজে আসছে না।
অতিসম্প্রতি বনভোজনের দায়িত্ব না পাওয়ায় একটি আঞ্চলিক সংগঠন দুই ভাগ হয়ে গেছে। পরে একই সংগঠনের ব্যনারে পৃথক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে। তবে একই সংগঠনের দুটি পৃথক বনভোজন আয়োজনে বিব্রত হয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা। তাদের মতে, সংগঠনের দুই গ্রুপের সবাই পরিচিত। কোনটি রেখে কোনটিতে যাব। পরে কোনোটিতেই যাইনি।
আসছে লেবার ডে উইকেন্ডে উত্তর আমেরিকায় ৩টি ফোবানা সম্মেলন হচ্ছে। এরমধ্যে জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি, নিউইয়র্কের বাফেলোতে একটি এবং অন্যটি কানাডার মন্ট্রিয়লে। নিউইয়র্কের দুটি ফোবানার কর্মকর্তারা এক হয়েছেন। ফলে বিগত কয়েকটি বছর চারটি করে ফোবানা হলেও একটি মাত্র কমলো। আর কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ফোবানা ভেঙেছিল প্রায় তিন দশক আগে। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর নেতৃত্বের কোন্দলে ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়ে যায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)। গত ৩১ বছর ধরে বিভক্ত ফোবানার ব্যানারে পৃথক অনুষ্ঠান হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বদেশ-সংস্কৃতির আলোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নতুন প্রজন্মে বাঙালিত্ব প্রবাহিত করা এবং মূলধারায় জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সংকল্পে যে আলোকিত ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছিল, অনৈক্যের কারণে তা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত।
ফোবানার ভাঙন ঠেকাতে এবং ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন করার প্রয়াসে অনেকেই বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কারো চেষ্টাই কাজে আসেনি। আর এখন যতগুলো ফোবানা হয়েছে তাতে কেউ না কেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন কেউ অবশিষ্ট নেই, অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি খুুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেবেন। আবার কেউ উদ্যোগ নিলে তার কথা সবাই শুনবেন, এমন ব্যক্তিও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা যাচ্ছে না।