Thikana News
১৮ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

অপরাধে জড়িত হলে বৈধ নথিপত্রও রক্ষা করতে পারবে না

অপরাধে জড়িত হলে বৈধ নথিপত্রও রক্ষা করতে পারবে না
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই মনে করেন, তিনি সোনার হরিণ হাতে পেয়ে গেছেন। তার আর কোনো সমস্যা নেই, নিশ্চিন্ত মনেই এখানে থাকতে পারবেন। ফলে অনেকেই ছোট-বড় নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন সাবওয়ের টিকিটের অর্থ না দিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করাও অপরাধ। আমেরিকায় নৈতিক চরিত্রের অধিকারী নন এমন মানুষেরা আর থাকার সুযোগ পাবেন না। ফলে যারা সাবওয়ের ভাড়া না দিয়ে যান, তারা ধরা পড়লে পুলিশ ৫০ ডলার জরিমানা করে টিকিট দেয়। এই জরিমানা অনেকেই পরিশোধ করে দেন। কিন্তু এটি তার হিস্ট্রিতে লেখা থাকে। ফলে ওই ব্যক্তি যখন তার গ্রিনকার্ড কিংবা সিটিজেনশিপের আবেদন করবেন, তখন তার এই টিকিট না কাটার বিষয়টি সামনে আসতে পারে। এ ধরনের ছোট অপরাধের কারণে বৈধ অন্যান্য নথিপত্র থাকার পরও তার সিটিজেনশিপের আবেদন বাতিল হতে পারে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর অনেকেই অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় যারা ওই সরকারের দ্বারা রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ এনে অ্যাসাইলাম ফাইল করেছেন, তাদের বেশির ভাগ কেস গ্র্যান্ট হয়েছে। কিন্তু গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন দেশে মানুষ রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এটা আর বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলেও অ্যাসাইলাম ফাইল করছেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিকসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের কেস গ্র্যান্ট হচ্ছে কম। যাদের অ্যাসাইলাম কেস ডিনাই হচ্ছে, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অ্যাসাইলাম প্রার্থীরা অনেকেই ভয়ে আছেন। নতুন যারা ফাইল করার আশা করছিলেন, তারা অনেকেই এখন ফাইল করছেন না। অপেক্ষা করছেন।
সূত্র জানায়, এখন কেসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ইমিগ্রেশন অফিসাররা দ্রুত অপেক্ষমাণ কেসগুলোকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন, দ্রুত ইন্টারভিউ ডেট পড়ছে। পাশাপাশি যারা স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট করার পর ফাইল করছেন, সেগুলোর মধ্যে যারা যোগ্য, তাদের কেস অ্যাপ্রুভ হচ্ছে। তবে যারা যোগ্য নন, তাদের কেস ডিনাই হচ্ছে অথবা রিকোয়েস্ট ফর ফার্দার এভিডেন্স চাওয়া হচ্ছে। ফলে কেস পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার আবেদন জমা দেওয়ার সময় কেস হিস্ট্রি জমা দেননি। এতে অনেক সময় ওই কেসের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। পরে কেস হিস্ট্রি জমা দিলেও তা সেভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না।
সূত্র জানায়, সত্যিকারের বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে বসবাস করেন। সবকিছুুই ঠিক আছে। ইন্টারভিউও ভালো হয়েছে। স্বামীর গ্রিনকার্ডের ইন্টারভিউ হলেও কেস অ্যাপ্রুভ হয়নি। তিনি আরএফই পেয়েছেন। এখন তাকে রিকোয়েস্ট ফর ফার্দার এভিডেন্স দিতে হবে। ওই নথিপত্র পাঠানোর পর অফিসার তাকে যোগ্য মনে করলে তিনি গ্রিনকার্ড পেতে পারেন, আবার নাও পারেন। সূত্র জানায়, তারা ধরেই নিয়েছিলেন, কেস অ্যাপ্রুভ হবে কিন্তু হয়নি। আসলে এখন অনেক কড়াকড়ি চলছে। এ কারণে প্রতিটি কেস ব্যাপক পর্যালোচনা ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যাদের সামান্য অপরাধের সঙ্গেও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের আবেদন ডিনাই হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এমন এক ব্যক্তি গিয়েছিলেন অ্যাসাইলাম কেসের হাজিরা দিতে। এর আগে তার, তার স্ত্রী ও সন্তানের ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড হয়েছিল। তার কেসও ডিনাই হয়েছে। কেস ডিনাই হওয়ার পর তাদেরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের আপিল করারও কোনো সুযোগ ছিল না। বর্তমানে নিয়ম করা হয়েছে, যদি কোনো কেস ডিনাই হয় এবং তাকে এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে তার ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড থাকলেও তিনি এ দেশে থাকতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। যদি দেশ না ছাড়েন, তাহলে এক দিনও বেশি থাকার কারণে তিনি ওভার স্টে করেছেন বলে গণ্য হবে। ওভার স্টে করার কারণে তিনি ভবিষ্যতে আর এ দেশে আসার যোগ্য নাও হতে পারেন।
সূত্র জানায়, এ দেশে অনেক বছর ধরে আছেন, এমন অনেকেই গ্রিনকার্ড পেয়েছেন। তারা সিটিজেনশিপের জন্য আবেদনও করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ যদি গ্রিনকার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন, তাহলে তার সিটিজেনশিপ আবেদন বাতিল হতে পারে। এ ছাড়া কেউ কোনো অপরাধ করার পর অপরাধের কেস নিষ্পত্তি হলেও তিনি যদি সেই কেসের তথ্য গোপন করেন এবং ইন্টারভিউয়ের সময় সেটি ধরা পড়ে, তাহলেও তার আবেদন বাতিল হতে পারে। সেই সঙ্গে তাকে ডিপোর্ট করা হতে পারে। এমনকি গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।
এ বিষয়ে একজন অ্যাটর্নি বলেন, দিন যত যাচ্ছে ইমিগ্রেশনের সবকিছুই অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। তাই কেউ জীবনে কখনো কোনো অপরাধ করে থাকলে সেই অপরাধ কেসের নিষ্পত্তি হলেও আবেদনে এর উল্লেখ করতে হবে এবং কেস নিষ্পত্তির সব নথিপত্র দিতে হবে। কোনো টিকিট খেলেও সেই টিকিটের অর্থ পরিশোধ করার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। যদি উল্লেখ না করা হয়, তাহলে এটি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ধরতে পারলে বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে নির্যাতিত, তারা অ্যাসাইলাম কেস ফাইল করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের কেসের ভিত্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, সেগুলো অনুমোদন না হওয়ার শঙ্কাই বেশি।

কমেন্ট বক্স