Thikana News
০৯ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
মারামারি ঠেকাতে হিমশিম পুলিশ

ডাইভারসিটি প্লাজায় দুই  গ্রুপের তুমুল হট্টগোল

ডাইভারসিটি প্লাজায় দুই  গ্রুপের তুমুল হট্টগোল
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সামনেই যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে নানান স্লোগান দিলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিউইয়র্ক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। ৩ আগস্ট রোববার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ ঘটনা ঘটে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল প্যাট্রিয়ট অব বাংলাদেশ নামে একটি নতুন সংগঠন, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের পেশাজীবী সচেতন নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে যুবলীগ কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। ফলে অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটে। এর জেরে বিএনপি ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটি গ্রোসারির প্রবেশ পথে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সমাবেশে লেখক-কলামিস্ট মিনা ফারাহ্্’র বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে প্রতিবাদের মুখে মিনা ফারাহ মাইক ছেড়ে মঞ্চ ত্যাগ করে দর্শক সারিতে গিয়ে বসেন। সেখানেও নেতা-কর্মীদের তেপের মুখে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানে মিনা ফারাহ বলেন, ‘আমি বলতে চাই যে একাত্তর সাল থেকে চব্বিশ সাল পর্যন্ত ৫৪ বছরে ভুল বিপ্লব করছি আমরা একের পর একটা, পঁচাত্তরে ভুল বিপ্লব হইছে, শেষ করি নাই ফ্যাসিবাদ, মাইনাস ওয়ান করি নাই। আমরা একটি পরিবারকে সুযোগ পেয়েও শেষ করি নাই। সেই পরিবারটা মুজিব পরিবার। যেহেতু আমরা পুরো পরিবারকে শেষ করার পরই মাইনাস ওয়ান করতে পারি নাই। এরফলে মাইনা ওয়ান, শেষে গিয়ে হলো মাইনাস টু। ২০০৮ সালে আমরা আবার সুযোগ পেলাম, দুটি পরিবার দুটি ফ্যাসিস্ট-সন্ত্রাসী, এদেরকে ফিনিশ করে দেশটিকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনতে, আমরা সেটিও মিস করলাম। আমরা ওটা মিস কইরে আবার দুটো ফ্যাসিবাদকে রেখে দিলাম। একটা হচ্ছে বিএনপি আরেকটা আওয়াম লীগ। হয়তো (আমার এ বক্তব্য) অনেকের পছন্দ হবে না, কিন্তু আমি স্টেট ফরোয়ার্ড কথা বলি, আই ডোন্ট কেয়ার, আই ডোন্ট বিলং অ্যানি পার্র্টি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি-দুটাই ফ্যাসিবাদ।’ মিনা ফারাহ আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটোই ফ্যাসিস্ট দল। তারা আমার দেশকে লুটেছে, ব্যাংকগুলো খালি করে, পাচার করে আমাদেরকে বানিয়েছে একটি ভিক্ষুকের রাষ্ট্র। উই ডু নট লাইক। নাউ, এখোন আমাদের চব্বিশ সালটাও ভুল বিপ্লব হয়েছে। সো আই অ্যাম সেইং’...আর বলতে পারেননি তিনি। 
সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোসেন বাদলসহ অনেকে আপত্তি করতে থাকেন। ‘ধর ধর’ বলে অনেকে মঞ্চের দিকে তেড়ে গেলে এবং আপত্তির মুখে মাইক ছেড়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন মিনা ফারাহ। মিনা ফারাহ দর্শক সারিতে গিয়ে বসেন। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীসহ দর্শক সারির অনেকে চিৎকার শুরু করলে মিনা ফারাহ বিনা বাক্য ব্যয়ে সমাবেশ স্থল ত্যাগ করেন। এসময় উপস্থাপক দেলওয়ার হোসেন শিপন বলেন, উনি ওনার বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা সেজন্যে দুঃখিত। আমি একটা কথা বলতে চাই যে, ওনার বক্তব্য আমরা প্রত্যাহার করে নিলাম। 
আয়োজক সংগঠক ‘প্যাট্রিয়ট অব বাংলাদেশ’র অন্যতম সংগঠক মশিউর রহমান লিটন বলেন, আমরা কেউই মায়ের পেট থেকে শিখে আসিনি। নানাভাবে শিখছি। তাই ধৈর্য ধরুন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে বক্তব্য দিন। 
আয়োজকদের অন্যতম ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের মাইক হাতে নিয়ে বলেন, ‘উনি বয়স্ক মানুষ। হয়তো অসুস্থ, রোগী। বলতেই পারেন। ঠিক আছে, আমি এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি। এভাবে বলতে পারেন না। এটা ঠিক হয়নি। আমরাও শহীদ জিয়াকে রেসপেক্ট করি। ওনার আদর্শকে আমরাও মানি। লেটস ওয়ার্ক টুগেদার।’ 
এরপর পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত হয় এবং আলোচনা পর্ব অব্যাহত রাখার মধ্যেই সমাবেশ স্থলের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীসহ আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান শুরু করেন। একদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আলোকে বক্তব্য, আরেকদিকে জয় বাংলা স্লোগানে সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে। সমাবেশের লোকজন হতভম্ব, মঞ্চ থেকে দৃষ্টি নিপতিত হয় যুবলীগের স্লোগানের প্রতি। বেশকিছুক্ষণ এভাবে চলার পর পুলিশ এসে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানদাতাদের ইত্যাদি সুপার মার্কেটের অপর প্রান্তে নিয়ে যান। সেখানে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করলে বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন বাদল পরিস্থতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানতে চান যে, কেউ আহত হয়েছে কিনা। না সূচক জবাব পাওয়ায় গ্রেপ্তারের উদ্যোগ থেমে যায়। নিউইয়র্ক পুলিশের সদস্যরা যুবলীগের সমর্থকদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। এরপর সমাবেশ চলতে থাকে।

কমেন্ট বক্স